ভূমিক্ষয় কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
বৃষ্টি, নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ ইত্যাদির ক্রিয়ায় ভূভাগের ক্ষয় ঘটে এবং ভূমিপৃষ্ঠের উচ্চতা কমতে থাকে। ভূমিপৃষ্ঠের এভাবে ক্ষয়কে ভূমিক্ষয় বলে।
ভূমিক্ষয়ের প্রকারভেদঃ-
ভূমিক্ষয় দুই প্রকার যথা:« প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়
« মানুষ্য কর্তৃক ভূমিক্ষয়।
প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়: ভূমিক্ষয়ের প্রাকৃতিক হস্তক্ষেপ ব্যাপক। ভূ সৃষ্টির শুরু থেকেই এর ক্ষয় শুরু হয়েছে। দীর্ঘকালের এই ক্ষয়ের ফলেই নদীর মোহনায় বা সমুদ্রে চর সৃষ্টি হয়েছে বা দ্বীপ গড়ে উঠেছে। এই ভূমিক্ষয়ের ফলে পৃথিবীর অনেক অঞ্চল উর্বর হয়েছে আবার অনেক অঞ্চল অনুর্বর হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অনবরত ভূমিক্ষয় হচ্ছে অথচ আমরা তা উপলদ্ধি করি না। বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত প্রাকৃতিক কারণশুলোর মধ্যে অন্যতম। এগুলো চলার পথে ভূ পৃষ্ঠের মাটির কণা বহন করে নিয়ে যায়। এ জন্য যে পরিমাণ মাটির ক্ষয় হয় তা খুবই নগণ্য এবং দৃষ্টিগ্রাহ্যও হয় না। হয়তো তাই ভূমির এই ক্ষয়কে বলা হয় স্বাভাবিক ক্ষয়। প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয় মাটি গঠন প্রক্রিয়ারই একটি অংশ বলে বিবেচতি হয়। মাটি গঠন ও ভূমিক্ষয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য রয়েছে। দীর্ঘকাল ভূমিয়ের ফলে কৃষিকাজ একটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে।
মানুষ কর্তৃক ভূমিক্ষয়: মানুষের বাচার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্য উৎপাদনের জন্য মানুষ মাটিকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে আসছে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে। ভূমিকর্ষণ, পানি সেচ, পানি নিষ্কাশন ইত্যাদি কাজ কৃষিকাজের মুল অংশ। এ কাজগুলো দ্বারা মাটিকে প্রতিনিয়ত উৎপীড়ন করা হচ্ছে। ফলে ভূমিগুলো প্রাকৃতিক শক্তির তথা বৃষ্টি ও বাতাসের নিকট উন্মোচিত করছে এবং ক্ষয় হচ্ছে। মাটিকে যত ব্যবহার করা হবে ততই এর ক্ষয় হতে থাকবে।
ভূমিক্ষয়ের শ্রেণিবিভাগঃ-
ভূমিক্ষয়কে প্রধানত দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা:« বৃষ্টিপাতজনিত ভূমিক্ষয়
« বায়ুপ্রবাহজনিত ভূমিক্ষর
বৃষ্টিপাতজনিত ভূমিক্ষয়: বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশে ব্যাপক ভূমিক্ষয় হয়। এই ভূমিক্ষয়কে নিচের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়ঃ
« আস্তরণ ভূমিক্ষয়
« রিল ভূমিক্ষয়
« নালা বা গালি ভূমিক্ষয়
« নদী ভাঙন।
আস্তরণ ভূমিক্ষয়: যখন বৃষ্টির পানি বা সেচের পানি উঁচু স্থান থেকে ঢাল বেয়ে জমির উপর দিয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় তখন জমির উপরিভাগের নরম ও উর্বর মাটির কণা কেটে পাতলা আবরণের বা আস্তরণের মতো চলে যায়। এইটাকেই বলা হয় আস্তরণ ভূমিক্ষয়।
রিল ভূমিক্ষয়: রিল ভূমিক্ষর আস্তরণ ভূমিক্ষয়েরই দ্বিতীয় ধাপ। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে পানি বেশি হলে জমির ঢাল বরাবর লম্বাকৃতিয় রেখা সৃষ্টি হয়। যা অনেকটা হাতের রেখার মতো।
নালা বা গালি ভূমিক্ষয়: এই ভূমিক্ষয় আন্তরণ ভূমিক্ষয়ের তৃতীয় ধাপ। অর্থাৎ রিল ভূমিক্ষয় থেকেই নালা বা গালি ভূমিক্ষয়ের উদ্ভব।
নদী ভাঙন: নদী ভাঙন বাংলাদেশের ভূমিক্ষয়ের একটি উল্লেখযোগ্য কারন। চাদপুর, সিরাজগঞ্জ, গোয়ালন্দ প্রভৃতি অঞ্চলে প্রতি বৎসরই নদী ভাঙনে শত শত হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে।
বায়ু ভূমিক্ষয়: যেসব এলাকায় গাছপালা কম এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম, সেসব এলাকায় বাত্যাজনিত কারণে ভূমিক্ষয়ের প্রকোপ দেখা যায়।
উৎস ও ব্যবহারঃ-
কৃষি বিষয়ক এই লিখাটি ইন্টারনেট ও বিভিন্ন বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করে লিখা হয়েছে। এই লিখাটি সবার জন্যে উন্মুক্ত। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া যে কেউ এই লিখাটি ব্যবহার করতে পারবেন।